অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাঙ্গামাটির কাপ্তাই দেশের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদে খনন কাজ শুরু করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে স্বল্প পরিসরে জেলা শহরের তবলছড়ির কাশেম বাজার এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন কালিমন্দির-আসামবস্তিতে নৌ-পথের বন্ধ হয়ে যাওয়া যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে উক্ত এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের সংযোগ পয়েন্টে ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ মিটার প্রশস্ত ও ২ দশমিক ৫ মিটার গভীর করতে খাল খননের কাজ শুরু করেছে পাউবো।
এছাড়া পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম পাউবো’র আওতাধীন কাপ্তাই হ্রদের কাচালং নদী এবং রাইখিয়ং নদীর বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট খনন করতে প্রায় ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাউবো রাঙ্গামাটি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কাপ্তাই হ্রদের বিশাল এলাকাজুড়ে খাল খননের বিষয়ে একটি সুখবর দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরে সময়ে কাপ্তাই হ্রদে কম বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে কাপ্তাই হ্রদ প্রায়ই শুকিয়ে যাওয়াতে মানুষের যে স্বাভাবিক চলাফেরা তা স্তিমিত হয়ে গেছে। এর প্রেক্ষিতে কাপ্তাই হ্রদের কাচালং নদী এবং রাইখিয়ং নদীর জনগুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১০০ কিলোমিটার সংযোগ পয়েন্টগুলো খনন করতে পাউবো’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ডিপিপি আকারে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে এবং প্রকল্পগুলো বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে।
তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদের কিছু এলাকায় জনস্বার্থে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্টে আমরা পানি উন্নয়নবোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে খনন কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তবলছড়ি-কালিবাড়ী-আসামবস্তী ব্রিজ সংলগ্ন সংযোগ পয়েন্টে ৩৫০মিটার জায়গা খনন শুরু করা হয়েছে এবং জুন মাসের মধ্যে এই খনন কাজ সম্পন্ন হওয়াসহ বর্ষাকালে এই এলাকায় আবারো নৌ-পথে জনসাধারনের যোগাযোগ সহজ হবে বলে জানান তিনি।
তয়ন কুমার বলেন, কাপ্তাই হ্রদে তিনটি নৌ-যান চলাচল সংশ্লিষ্ট নৌ-রুট এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে কর্ণফুলীর ছোট হরিণা-বরকল রুট, দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাঘাইছড়ি কাচালং নৌ-রুট এবং তৃতীয়টি হচ্ছে বিলাইছড়ি-রাইখিয়ং নৌ-রুট।
কাপ্তাই হ্রদের এই তিনটি নৌ-রুটের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর দায়িত্বে রয়েছে বিআইডব্লিউটি। তারা কর্ণফুলীতে ড্রেজিংসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ করবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী কাচালং নদী এবং রাইখিয়ং নদী ড্রেজিংয়ের জন্য পাউবো
ডিপিপি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই রাঙ্গামাটিবাসীকে হ্রদ ড্রেজিং নিয়ে বড় একটি সুখবর দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূলক দে বাসস বলেন, জেলার কাপ্তাই হ্রদ হচ্ছে আমাদের দেশের মাছের বিরাট একটি চাহিদা পূরণসহ সরকারের রাজস্ব আয়ের জন্য একটি সম্পদ। এই হ্রদের উপর এখানকার হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীলের পাশাপাশি মৎস্য-কৃষিসহ বিভিন্ন রকম ব্যবসাও এই কাপ্তাই হ্রদের উপরই নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন কারনে হ্রদে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখানে নৌ চলাচলসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় হ্রদের ড্রেজিং জরুরী হয়ে পড়েছিল এবং তা এখানকার জনসাধারনের একটি জোরালো দাবি ছিল। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং শুরু হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি, আশা করছি ভবিষ্যতে পুরো কাপ্তাই হ্রদ এলাকা জুড়েই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হবে।
বিদ্যুৎ, মৎস্য,কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সম্ভাবনাময় কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
Leave a Reply